বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ সভায় সহজ শর্তে বেশি ঋণ চাইলেন অর্থমন্ত্রী

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ সভায় সহজ শর্তে বেশি ঋণ চাইলেন অর্থমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে শুক্রবার শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বসন্তকালীন বৈঠক। তিন দিনের এ বৈঠকে দুই সংস্থার সদস্যভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীসহ সরকারি নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে যোগ দেয়। প্রথম দিনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরে এবং চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সহজ শর্তে আরও বেশি ঋণ দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কাছ অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ প্রতিনিধিরা বর্তমান সরকারের গৃহীত কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং আগামীতে আরও সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।  বৈঠকে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ঋণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেকে বেড়েছে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়শীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনে স্বীকৃতি পাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বেড়েছে। গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাত শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এটি বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। এ ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এসব অগ্রগতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী দাতাদের উদ্দেশে বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আরও বেশি আর্থিক সহায়তা দরকার। 

 

এ বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। এদের অস্থায়ী পুনর্বাসনে অনেক টাকা লাগবে। কিন্তু এত খরচ সরকারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এ প্রস্তাবের জবাবে বৈঠক থেকে সরাসরি সহায়তার প্রতিশ্রুতি মেলেনি। তবে বৈঠকের আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টের চিমিয়াও ফান অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং পুরো অর্থ অনুদান হিসেবে দেবে সংস্থাটি। অর্থমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন সাংবাদিকও ওয়াশিংটনে আসেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি। এ সময় ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ অফিসের বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সচিব কাজী শফিকুল আযম, বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার শাহাবউদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  প্রতিবছর বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সঙ্গে দুটি বৈঠক হয়। এর মধ্যে এপ্রিলে বসন্তকালীন ও অক্টোবরে বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভায় ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হয় এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে সহায়তা দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, এ বৈঠক থেকে সরাসরি ঋণ পাওয়া যায় না। তবে কমিটমেন্টের একটি ভিত্তি তৈরি হয়।  জানা যায়, গত তিন বছরে ইন্টারনা্যশনার ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বা আইডিএর আওতায় দেওয়া পুরো ঋণের সদ্ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ। আলোচ্য সময়ে ৪০০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এ ধারাবাহিকতায় আগামী তিন বছরে সাড়ে চারশ' কোটি ডলার ঋণ দেবে সংস্থাটি। এর মধ্যে দুইশ' কোটি ডলারের চুক্তি সই করেছে। এক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি আগামী বাজেটের আগে স্বাক্ষরিত হবে। সরকার আশা করছে দ্বিতীয় দফায় পুরো ঋণের ব্যবহার করতে পারবে বাংলাদেশ। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাংক থেকে আরও বেশি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। সহজ শর্ত বা নমনীয় ঋণের পাশাপাশি অনমনীয় ঋণ (কঠিন শর্ত) প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, আমাদের ঋণ ব্যবহারের সামর্থ্য বেড়েছে। ফলে আরও বেশি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, অর্থনীতির অবস্থা এখন অনেক ভালো। ফলে অনমনীয় ঋণ গ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না। 

 

সূত্রঃ দৈনিক সমকাল

ছবিঃ সংগৃহীত