বেনজির মা হওয়ার খবর গোপন রেখেছিলেন
বিশ্বে এখন আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরর্ডানের মা হওয়া।
গত বৃহস্পতিবার ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। এরপর সদ্যোজাত সন্তানকে কোলে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ছবি পোস্ট দেন ইনস্টাগ্রামে। সবাই তাঁর প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, সে জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তাঁর মতো আরেক প্রধানমন্ত্রীও ক্ষমতায় থাকার সময় মা হয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। তবে তাঁর মা হওয়ার সময়ে তাঁর চারপাশের পরিবেশটা ছিল খুব জটিল। সেই সুযোগে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা চেষ্টা হয়েছিল।
জাসিন্ডা গণমাধ্যমে নিজের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর প্রকাশ করলেও বেনজির তাঁর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর গোপন রেখেছিলেন। দেশের জনগণ তো দূরের কথা, তাঁর সহকর্মীরাও এ নিয়ে অন্ধকারে ছিলেন। বেনজিরের মন্ত্রিসভার এক সদস্য জাবেদ জব্বার পরে বিবিসিকে বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় কেউ জানত না যে তিনি মা হতে যাচ্ছেন।’
বেনজির সে সময় এক রাজনৈতিক ঝড়ের মধ্য দিয়ে গেছেন। বখতওয়ারের যখন জন্ম হয়, তখন সামরিক সহায়তায় ডানপন্থী একটি জোট তাঁর সরকারকে টেনে নামাতে এক হয়। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে একটি অনাস্থা ভোটে টিকে গিয়েছিলেন বেনজির। পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা বা আইএসআই সাবেক কিছু সদস্য অর্থের বিনিময়ে পার্লামেন্ট থেকে বেনজিরের সমর্থকদের কিনে নিতে চেয়েছিলেন।
পাকিস্তানে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রেসিডেন্টের যে একক ক্ষমতা ছিল, তা বাতিল করতে সংগ্রাম করছিলেন বেনজির। এই সংগ্রাম মিডনাইট জ্যাকেল নামে পরিচিত। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত সফল হননি।
সে জন্য বেনজির সন্তানসম্ভবা হওয়ার বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশ করেননি এবং মাতৃত্বকালীন কোনো ছুটিও নেননি। বেনজির তাঁর ব্যক্তিগত গাইনোকলজিস্টকে দিয়ে অস্ত্রোপচার করান এবং সন্তানের জন্মের পর চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দ্রুত কাজে যোগ দেন।
পরে সে সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে বেনজির বলেছিলেন, ‘পরের দিনই আমি কাজে ফিরেছিলাম। সরকারি কাগজপত্র পড়েছি এবং সরকারি ফাইলে সই করেছি। এরপর আমি শুনেছি, কোনো নারী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এই প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এটি যেকোনো নারীর জন্য এক বিশেষ মুহূর্ত। কারণ, এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে একজন নারী নেতৃত্বের সর্বোচ্চ অবস্থানে থেকে এবং নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার পাশাপাশি সন্তানের জন্ম যেমন দিতে পারে, তেমনি কাজও করতে পারে।’
পাকিস্তানের রাজনীতিতে যতটা অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকি ছিল, সেটি নিউজিল্যান্ডের রাজনীতিতে নেই। যেমন বখতাওয়ারকে জন্ম দেওয়ার কয়েক মাস পরে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট গুলাম ইসহাক খান বেনজির ভুট্টোর সরকারকে বাতিল করেছিলেন। পরের বছর পাতানো এক নির্বাচনের মাধ্যমে বেনজির ভুট্টোর প্রতিপক্ষ দল ক্ষমতায় আসে।
ওই সময় তৎকালীন বিরোধী নেতা সৈয়দা আবিদা হুসাইন বেনজিরকে ‘লোভী’ আখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, বেনজির দেশের সেবা না করে বরং ‘মাতৃত্ব, পরিবার এবং গ্ল্যামারের’ দিকে বেশি মনোযোগী ছিলেন।
বেনজিরের অপর দুই সন্তানের জন্মও একইভাবে গোপনীয়তার ভেতর দিয়ে হয়েছিল।
১৯৮৮ সালে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সে বছর নভেম্বর মাসে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। বেনজির ভুট্টোর গর্ভে তখন ছিল বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি।
একটা কথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে যে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জেনারেল জিয়া নভেম্বর মাসের শেষ দিকে নির্বাচন ঘোষণা করেছিলেন।
কারণ, সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল নভেম্বর মাসে বেনজির সন্তানের জন্ম দেবেন। ফলে তিনি ভালোমতো নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না।
কিন্তু বিলাওয়ালের জন্মের খবর আসে সেপ্টেম্বর মাসে এবং নির্বাচনী প্রচারে তখন সেটি গতির সঞ্চার করে। বলা হয়ে থাকে, বেনজির ভুট্টো ইচ্ছাকৃতভাবে সন্তানের জন্মদানের সময় সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রচার করেছিলেন।
জাসিন্ডাও বেনজিরের মাতৃত্বের মিল
২১ জুন কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে জাসিন্ডা আরডার্ন। ৬৫ বছর আগে ১৯৫৩ সালে ঠিক এই দিনে জন্ম হয়েছিল বেনজির ভুট্টোর। তিনি ১৯৯০ সালে ২৫ জানুয়ারি মেয়ে বখতওয়ার ভুট্টোর জন্ম দেন। আর তখন বেনজিরের বয়সও ৩৭।
বেনজির যখন মা হন, তখন তিনি মাত্র ক্ষমতায় এসেছেন এক বছরের একটু বেশি। আর জাসিন্ডা আরডার্ন ক্ষমতায় এসেছেন এখনো এক বছর হয়নি।
সূত্র ও ছবিঃ দৈনিক প্রথম আলো