মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন একতরফা ও ভিত্তিহীন: তথ্যমন্ত্রী

মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন একতরফা ও ভিত্তিহীন: তথ্যমন্ত্রী

সরকারের কোনো ভাষ্য না নিয়ে একতরফাভাবে তৈরি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মানবাধিকার প্রতিবেদনকে মনগড়া, ভিত্তিহীন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত মন্তব্য করে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

রোববার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সদ্য প্রকাশিত এ প্রতিবেদন নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার একতরফাভাবে বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর বার্ষিক প্রতিবেদন দিয়ে আসছে। এটা তাদের একতরফা পদক্ষেপ।

মন্ত্রী বলেন, যে সকল দেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবেদন দেয়, সৌজন্যমুলকভাবেও সেসব দেশের সরকারের বক্তব্য বা মতামত নেয় না। এটি কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।

হাসানুল হক ইনু বলেন, কোনো দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির সময় সেদেশের সরকারের ভাষ্য না নেয়া কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। বাংলাদেশের ওপর এ প্রতিবেদন তৈরির আগে তথ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নেয়া উচিত ছিল। তা না করে এ ধরনের মনগড়া ভিত্তিহীন প্রতিবেদন আমরা সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি।

এ রিপোর্টে যে বেসরকারি সংস্থাগুলোর বরাত দেয়া হয়েছে তাদের বক্তব্যও পরষ্পরবিরোধী- উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এদের মধ্যে একটির নাম ‘অধিকার’। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশ শেষে তারা হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেবার পর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছিল। ‘অধিকার’ এনজিও তালিকা দিতে ব্যর্থ হয়। এমনকি পরবর্তীতে তারা গুটিকতক যেসকল ব্যক্তি নিখোঁজ এবং নিহত হয়েছিল বলে দাবি করেছিল, তাদেরকেও জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এমন এনজিও’র বরাতে তৈরি প্রতিবেদন সঠিক হবার কথা নয়।’ 

ইনু বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যম খুবই সরব এবং নিঃসংকোচে মত প্রকাশ করে বলে রিপোর্টে স্বীকার করে নেবার পরও বলা হয়েছে সরকারবিরোধী বক্তব্যের জন্য তাদের সাথে সরকারের নেতিবাচক সম্পর্ক, যে অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’

তিনি বলেন, ‘সমালোচনার জন্য কোনো গণমাধ্যমের সাথে সরকারে নেতিবাচক আচরণের ঘটনা নেই। এদেশের গণমাধ্যম জীবন্ত এবং সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কথা বলার অধিকারের ওপর কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ নেই। সাংবাদিক কেউ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন বা কেউ দমন পীড়নের আতংকে আছেন, এমন অভিযোগও নেই’।

গণমাধ্যমের লাইসেন্স দেওয়ার বিষয় ব্যাখ্যা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্রের লাইসেন্স আইন অনুযায়ী প্রকৃত উদ্যোক্তাদের দেয়া হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন। সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজেই নিজেকে বিতর্কিত করে অবসর নিয়েছেন। তার বিষয়ে মার্কিন ওকালতি দুঃখজনক।’

প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিচারকদের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এ দেশের আইনে ঘুষ খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই, খেলে শাস্তি হয়। মাননীয় বিচারকবৃন্দ এবং আদালতের কর্মকর্তাদের বিরূদ্ধে ঘুষের অভিযোগ এলে তদন্ত হয়। প্রতিকার হয়। মার্কিন প্রতিবেদনের এ ঢালাও মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ খণ্ডন করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দায়মুক্তির বিধান বাংলাদেশে নেই। অতীতের সামরিক-স্বৈরশাসন আমলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও আরো কিছু অপরাধের জন্য দায়ীদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনার সরকার সে দায়মুক্তির বিধান বাতিল করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তদন্ত হয়, শাস্তি হয়, কারো দায়মুক্তি নেই।’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ২০১৭ সালের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতা সীমিতকরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, বেআইনি আটক এবং সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক গুমসহ নানা বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

 

সূত্রঃ দৈনিক সমকাল

ছবিঃ সংগৃহীত