অভিবাসন বিতর্কে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাডের পদত্যাগ

 অভিবাসন বিতর্কে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাডের পদত্যাগ

যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড পদত্যাগ করেছেন। বারবার ক্ষমা প্রার্থনা, ভুল স্বীকার ও সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দিয়েও অভিবাসীদের প্রতি নির্মম আচরণের দায় এড়াতে পারেননি তিনি। তুমুল সমালোচনার মুখে স্থানীয় সময় গতকাল রোববার রাতে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।

অ্যাম্বার রাডের পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের জন্য বড় একটা ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কেননা, অভিবাসনসহ বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয়ে অ্যাম্বার রাড সামনে থেকে প্রধানমন্ত্রী মেকে সুরক্ষা দিচ্ছিলেন। তাঁর পদত্যাগের পর মে অনেকটা অরক্ষিত হয়ে পড়লেন।

এ ছাড়া অ্যাম্বার রাডের বিদায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) প্রশ্নে মন্ত্রিসভার ভারসাম্যকে নষ্ট করবে। অ্যাম্বার রাড ইইউয়ের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পক্ষে ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে একই মানসিকতার কাউকে স্থলাভিষিক্ত করা প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের জন্য এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ।

সরকারের বিতর্কিত অভিবাসননীতির কারণে ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীদের (উইন্ডরাশ জেনারেশন) অনেকেই অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিলেন। এ নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত।

উইন্ডরাশ জেনারেশনের দুর্ভোগের জন্য গত সোমবার অ্যাম্বার রাড ক্ষমা চান। তাঁদের সবাইকে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। উইন্ডরাশ জেনারেশন নিয়ে তুমুল সমালোচনা ও পদত্যাগের দাবি তিনি অনেকটা কাটিয়ে উঠেছিলেন। তবে বিপত্তি ঘটে অন্যখানে।

উইন্ডরাশ জেনারেশনের ভোগান্তির জন্য জবাবদিহি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গত বুধবার অ্যাম্বার রাডকে ডেকেছিল। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাম্বার রাড দাবি করেন, অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের কোনো উদ্দেশ্য নেই।
ওই রাতেই গার্ডিয়ানে ফাঁস হওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ সালে কমপক্ষে ৭ হাজার ২০০ অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছে অভিবাসন বিভাগ। ২০১৫-১৬ সালে সেই লক্ষ্য বাড়িয়ে ১২ হাজার করা হয়।

বাধ্য হয়ে অ্যাম্বার রাড পরদিন বৃহস্পতিবার সংসদে স্বীকার করেন, অভ্যন্তরীণভাবে কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের অংশ হিসেবে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের লক্ষ্য রয়েছে। তবে বিষয়টি তিনি এত দিন জানতেন না বলে দাবি করেন। ভবিষ্যতে এমন লক্ষ্য থাকবে না বলেও ঘোষণা দেন।

বৃহস্পতিবার রাতে গার্ডিয়ান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ই-মেইল ফাঁস করে। এতে বলা হয়, ২০১৭ সালের জুন মাসে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের লক্ষ্য সম্পর্কে অ্যাম্বার রাডকে অবহিত করা হয়েছিল।

ওই রাতেই কয়েকটি টুইটার বার্তায় অ্যাম্বার রাড দাবি করেন, সংশ্লিষ্ট ই-মেইল তিনি দেখেননি। যেমন আরও অনেক ই-মেইল তাঁর পড়া হয়নি। তিনি আজ সোমবার সংসদে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন বলেও জানিয়েছিলেন।

গতকাল বিকেলে গার্ডিয়ানে ফাঁস হওয়া আরেকটি চিঠি অ্যাম্বার রাডের বারবার পাল্টা ব্যাখার ইতি টেনে দেয়। ওই চিঠিতে দেখা যায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে অ্যাম্বার রাড নিজেই প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের লক্ষ্য সম্পর্কে জানিয়েছেন।

কনজারভেটিভ–দলীয় রাজনীতিক অ্যাম্বার রাড ২০১০ সালে ইস্ট সাসেক্সের হ্যাস্টিংস অ্যান্ড রাই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেরেমা মে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হন। অ্যাম্বার রাড স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে মের স্থলাভিষিক্ত হন।

বিরোধী দল লেবার পার্টির উপপ্রধান টম ওয়াটসন এক টুইট বার্তায় বলেন, পুরো ঘটনার জন্য দায়ী থেরেসা মে। কিন্তু দায় বহন করলেন অ্যাম্বার রাড।

ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ডায়ান অ্যাবোট বলেন, অ্যাম্বার রাড সঠিক কাজটি করেছেন। কারণ, তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যে ২০১০ সালে কনজারভেটিভ দল ক্ষমতায় আসে। ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তাঁর সময়ে অভিবাসন নিয়ে বিতর্কিত কঠোর সব নিয়ম চালু হয়। শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরি, বাসা ভাড়া নেওয়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিবাসনের বৈধতা যাচাইয়ের নিয়ম বাস্তবায়ন হয়।

এতে দশকের পর দশক ধরে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছিলেন—এমন অনেকেই বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন। এসব মানুষ কখনো ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বা বৈধ কাগজপত্র নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি। বিতর্কিত অভিবাসননীতির কারণে অনেকে বেশ দুর্ভোগের শিকার হয়।

২০১২ সালে চালু হওয়া ওই নিয়মের কারণে অনেককে অবৈধ আখ্যায়িত করে যুক্তরাজ্য থেকে বিতাড়ন করা হয়। গোপনে লক্ষ্য নির্ধারণ করে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের কাজও ত্বরান্বিত করে অভিবাসন বিভাগ। এতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়াই জোর করে অভিবাসীদের বিতাড়নের অভিযোগ ওঠে। সমালোচনা হয়, লক্ষ্য পূরণে ছুটতে গিয়ে মানুষের অধিকার হরণ করছে অভিবাসন বিভাগ।

 

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো

ছবিঃ সংগৃহীত