চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে এ মাসেই মামলা
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে এ মাসের মধ্যেই মামলা করা হবে বলে জানিয়েজন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে কার বিরুদ্ধে মামলা হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মামলা করা হবে।
রোববার (২০ জানুয়ারি) সচিবালয়ের বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে করণীয় বিষয়ে সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকর গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মামলার জন্য আগামী ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ পর্যন্ত সময় আছে। এজন্য আমাদের একজন আইনজীবী আর আমারিকার একজন আইনজীবী আছেন। তারা যৌথভাবে বসে মামলার সময় ঠিক করবেন।
তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির ঘটনা ঘটেছে নিইউ ইয়র্কে। তাই মামলা সেখানেই হবে। আমাদের আইনজীবীরা এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। তবে কার বিরুদ্ধে কে মামলা করবে তার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। এছাড়া কয়জনকে আসামি, কয়জনকে বাদী ও কয়জনকে সাক্ষী করা হবে তা দুই আইনজীবী বসে ঠিক করবেন পরবর্তী ধাপে।
ফরাস উদ্দিনের তদন্ত রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে কিনা এমন এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের প্রয়োজন হলে করবো, না হলে করবো না। এছাড়া তদন্তে নেগেটিভ বা পজেটিভ কি আছে আমি কিছু জানি না। ঢাকায় বসে কে কি কমিটি করলো, কে কি রিপোর্ট দিলো, তা নিয়ে আলোচনার জন্য এখন সঠিক সময় না।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, আমেরিকার আইনজীবীরা যে আমাদের পক্ষে লড়বে তাদের কমিশন অনেক বেশি। প্রতিটি আইনজীবীর একটি নির্দিষ্ট কমিশন থাকে। তবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এদিকে গত ডিসেম্বরে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছিলেন, রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে দুই প্রতিষ্ঠানকে আসামি করে মামলা করা হবে। প্রতিষ্ঠান দু’টি হলো ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। মূল আসামি আরসিবিসি হলেও এ ঘটনার সঙ্গে অনেক দেশ জড়িত। এ মামলার জন্য আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নেয় দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে ২ কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কা ও ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে। এ ঘটনার প্রায় একমাস পর ফিলিপাইনের একটি পত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে বিষয়টি বাংলাদেশ জানতে পারে।
এ ঘটনা চেপে রাখতে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে গভর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান। বড় ধরনের রদবদল করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা মানি লন্ডারিং আইনে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির অভিযোগ এনে ১৫ মার্চ (২০১৬) মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর সিআইডি এ পর্যন্ত ২০ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকার গঠিত ফরাস উদ্দিনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনও প্রকাশ করা হয়নি। একইভাবে রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে রিজাল ব্যাংকের ওপর করা তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করেনি ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিএসপি (ব্যাংককো সেন্ট্রাল এনজি ফিলিপাইনস)। ফলে বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার ভেতরের অনেক তথ্যই প্রকাশিত হচ্ছে না।
চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত ফেরত এসেছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া যায়নি। বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার জন্য তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তাকেই এখন পর্যন্ত শাস্তির আওতায় আনা যায়নি। যদিও এর জন্য দায়ী করা হয়েছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি)।
সূত্রঃবাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম