মিয়ানমারের আচরণ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার যে আচরণ করছে, তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বিকেল পৌনে ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনায় মঙ্গলবার আরও অংশ নেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। এরপর কণ্ঠভোটে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
রোহিঙ্গা সংকটের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে রোহিঙ্গা। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। চুক্তিও হয়েছে। তাদের থাকার জন্য ভাসানচরে বাসস্থান নির্মাণ শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের যাতে মানবেতর জীবন যাপন করতে না হয়, তারা যতদিন নিজ মাটিতে ফিরতে না পারে, ততদিন যেন ভালোমতো থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
১০ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৬ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের ইতিমধ্যে আইডি কার্ড করা হয়েছে। মিয়ানমার আর কোনোদিন অস্বীকার করতে পারবে না, এরা তাদের লোক নয়। যখনই তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তখনই তাদের পরিচয়পত্র করে দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, 'মানবিক কারণে তাদের সহযোগিতা দিয়েছি। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বিশ্ববাসী সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছে।'
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিএনপি যখন ছিল, তখন এই পার্লামেন্টে যেসব অশালীন কথা হতো; যা ভাষায় উচ্চারণ করা যায় না। তারা কোনো গঠনমূলক আলোচনা করত না।
তিনি বলেন, 'বর্তমানে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে সংসদে গঠনমূলক দায়িত্ব পালন করছে। গঠনমূলক সমালোচনা করছে। যতগুলো বিল আসছে; সেগুলো তারা দেখছেন, সেখানে সব ধরনের সংশোধনী নিয়ে আসছেন। সেই সংশোধনী আমরা গ্রহণ করছি।'
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক চর্চাটা কীভাবে সুষ্ঠুভাবে করা যেতে পারে; তার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে এই সংসদে। সেই জন্য বিরোধী দলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন সরঞ্জাম কিনে দেওয়া হয়েছে। তাদের আবাসন সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। ফোর্সেস গোল ২০৩০ করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনী যাতে আধুনিক হয়, যুগোপযোগী হয় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা শান্তি চাই, কারও সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। কিন্তু কেউ আক্রমণ করলে তা মোকাবেলা এবং উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য সমস্ত বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদ বন্ধ করেছি। সকলের কাছে আহ্বান জানাই তারা যেন তাদের ছেলেমেয়ে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন তাদের শিক্ষার্থীরা কী করে বা কোথায় যায় তার খোঁজ নেন। সবাই যেন সজাগ থাকেন।'
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে সেতুর দুটি স্প্যান বসে গেছে। এই সেতু নিয়ে অনেক ঝড়ঝাপটা গেছে। তবে যে অভিযোগটা আমাদের দেওয়া হয়েছে সেটা যে গালগপ্প ছিল তা কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছিলেন। এত অল্প সময়ে একটি প্রদেশকে রাষ্ট্রে পরিণত করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ৫ বছরে উন্নত দেশে পরিণত হতো। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে সেই সুযোগটা আমরা হারিয়েছি।
সরকারের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি সূচকে বিশ্বের ৫টি দেশের মধ্যে এখন একটি বাংলাদেশ। ক্রয়ক্ষমতায় আমরা এখন ৩২তম অবস্থানে আছি। দেড় কোটির ওপরে মানুষের কর্মসংস্থান আমরা করে দিয়েছি।
সূত্রঃ দৈনিক সমকাল
ছবিঃ সংগৃহীত