কারো খবরদারির কাছে নতজানু হব না: প্রধানমন্ত্রী
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ সহ্য না করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'কারো খবরদারির কাছে নতজানু হব না। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।
রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ দরবারে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'দেশের উন্নয়নের জন্য যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করা দরকার এবং যা যা করা দরকার আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। সেই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও একটা সুসম্পর্ক বজায় রেখে ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার ঘটানোর ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। '
জাতির পিতার ১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষে দেওয়া ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা শান্তিকামী জাতি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু আত্মরক্ষা করার মতো ক্ষমতাও আমাদের থাকা দরকার। ”
শেখ হাসিনা বলেন, ওই একই ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আরও বলেছিলেন, “যে জাতি নিজেকে সম্মান করতে পারে না, আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে পারে না, সে জাতি দুনিয়ায় কোনোদিন বড় হতে পারে না। সে জন্য আজকে আমরা আত্মমর্যাদাবিশিষ্ট জাতি হিসেবে, আত্মমর্যাদা নিয়ে বাস করতে চাই। আমরা অন্য কারও ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না, অন্য কেউ আমাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক তাও আমরা সহ্য করবো না। আমরা এই নীতিতেই বিশ্বাসী। ”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করি এই কথাগুলো আমাদের সকলেই মনে রাখবেন। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ আমাদের। যুদ্ধে বিজয় অর্জন করে আমরা আমাদের দেশ পেয়েছি। কারো খবরদারির কাছে নতজানু আমরা হবো না। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। অনেক বাধা, অনেক ষড়যন্ত্র হবে, বার বার এসেছে সেগুলো অতিক্রম করেই তো আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এখনো অনেক বাধা, এখনো অনেক চক্রান্ত আছে। কারণ একটা দেশ যখন এতো দ্রুত অগ্রগতি লাভ করে সেটা হয়ত অনেকেই সহ্য করতে পারে না। সেই জন্যই হয়ত নানা ধরনের উৎপাত শুরু করে, তো সেগুলো নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বের সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাংলাদেশের। যে পররাষ্ট্র নীতি জাতির পিতা দিয়ে গেছেন সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতি অনুসরণ করে চলছি।
আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা-অসুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষ নজর দেয়ার নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, প্রযুক্তি আমাদের উন্নয়নের পথ খুলে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের এ ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে- যাতে এই প্রযুক্তি দেশের মানুষের ক্ষতি করতে না পারে।
তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ধরন পরিবর্তন হওয়ার কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য এসএসএফ সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিশ্বাস করি, এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের সঠিক নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনা, পেশাদারিত্ব এবং আন্তরিকতার মাধ্যমে এসএসএফ দিনে দিনে উন্নতি করতে থাকবে।
এসএসএফের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শেখ হাসিনা বাহিনীর শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও পেশাদারিত্বের দিক থেকে একটি আদর্শ নিরাপত্তা বাহিনীতে পরিণত হবে বলে আশা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান সংকলিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭৫টি বাণী সম্বলিত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর উক্তি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন, এসএসএফ মহাপরিচালক মজিবুর রহমান। পরে এসএসএফ এর কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করা হয়।
১৯৮৬ সালের ১৫ জুন রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বাহিনী (পিএসএফ) গঠিত হয়, যা পরবর্তীতে দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের পর ১৯৯১ সালে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ) নামে নামকরণ করা হয়।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু পরিবার, বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান বাংলাদেশে সফরে তাদের নিরাপত্তাসহ ভিভিআইপিদের নিরাপত্তায় কাজ করে এসএসএফ।
সূত্রঃ পিআইডি/ বাংলানিউজ