সিআরআর হার কমানোর ঘোষণা দিলেন অর্থমন্ত্রী

সিআরআর হার কমানোর ঘোষণা দিলেন অর্থমন্ত্রী

নগদ টাকার সরবরাহ বাড়াতে ব্যাংক মালিকদের দাবির মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা সংরক্ষণের (সিআরআর) হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

ব্যাংকগুলোকে বর্তমানে আমানতের সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদে জমা রাখতে হয়। এ হার এখন সাড়ে ৫ শতাংশ হবে।

রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বাজারে চলে আসবে।

এর আগে একই হোটেলে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এক মাসের মধ্যে ব্যাংকের ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কে নেমে আসবে। ব্যাংকের মালিকরা তাকে সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আশা করেন, মালিকরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন।

অবশ্য অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএবির সঙ্গে বৈঠকের পর সংগঠনটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, এক মাসের মধ্যে কমানোর বিষয়টি বাস্তবসম্মত নয়। এতটুকু বলা যায়, শিগগির কমে আসবে। কবে কমবে তা কেউই এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরও বলতে পারবেন না। তবে সিঙ্গেল ডিজিটে নামবে এটা নিশ্চিত। বেসরকারি ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যে তা করে দেখিয়েছে। তারা সাড়ে ৮ কিংবা ৯ শতাংশ সুদে দীর্ঘদিন ঋণ দিয়েছে।

আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যাংকগুলোর আমানতের একটি অংশ বিধিবদ্ধ জমা (এসএলআর) হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখতে হয়। বর্তমানে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ১৯ শতাংশ এসএলআর হিসেবে রাখার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকে নগদে রাখতে হয় সাড়ে ৬ শতাংশ। বাকি ১৩ শতাংশ সরকারি বিল বা বন্ড কিনতে হয়। কোনো ব্যাংক যদি কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে এসএলআরে অর্থ আমানতকারীদের কিছুটা হলেও সুরক্ষা দেয়।

বৈঠকে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আরাস্তু খান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ডা. এইচবিএম ইকবাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরী, ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের দাবির কারণে ইতিমধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাদের আরও কিছু দাবি ছিল। গভর্নরের উপস্থিতিতে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের দাবি ছিল, সিআরআর ৩ শতাংশ নামিয়ে আনা। আন্তর্জাতিক মান, অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ১ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুযোগ দেওয়া হবে। তবে জুনে আবার বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সিআরআর কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে কি-না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতির ওপর কোনো চাপ নেই। দেশে এমন কিছু হয়নি যে, মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। এটা অসম্ভব। ব্যাংক খাত নিয়ে গণমাধ্যমে নেতিবাচক রিপোর্ট বন্ধের জন্য ফাইন্যান্সিয়াল ইনফরমেশন অ্যাক্ট প্রণয়নে মালিকদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, এটা এখন হবে না। এটা দেখা হবে আগামী জুনে বাজেট আলোচনার সময়।

বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, চলমান তারল্য সংকট মেটানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এক শতাংশ সিএসআর কমানো হলে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাজারে আসবে। ফলে তারল্য সংকট অনেকটা কেটে যাবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সিআরআর রাখা হলেও এ বিষয়ে কোনো উপকার হয়নি। গত ১০ বছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও এর কোনো ভূমিকা নেই। এ টাকা একেবারে অলস পড়ে আছে।

ফারমার্স ব্যাংকের নাম উল্লেখ না করে নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, একটা ব্যাংকের সমস্যা হয়েছে। এতে অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান ভয়ে বেসরকারি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য বিভিন্নভাবে বোঝানোর ফলে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা অনেকটা থেমে গেছে।

 

সূত্রঃ দৈনিক সমকাল

ছবিঃ সংগৃহীত