কৃষকের স্বার্থে চাল আমদানি শুল্ক বাড়ছে: বাণিজ্যমন্ত্রী
বোরোতে বাম্পার ফলনের কারণে চাল আমদানিতে শুল্ক্ক বাড়িয়ে আগের জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে সরকার। আগামী (২০১৮-১৯) অর্থবছরের বাজেটে চাল আমদানিতে ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। আগামী ৭ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী। ওইদিন থেকেই নতুন শুল্ক হার কার্যকর হবে। কৃষকদের স্বার্থে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
সোমবার সচিবালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্র্রদূত রেনজস টেরিঙ্কের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সরকার ইতিমধ্যে চাল আমদানিতে শুল্ক্ক বাড়িয়ে আগের মত ২৮ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাজেট প্রস্তাবে এ বিষয়ে জানাবেন অর্থমন্ত্রী। ৭ জুন থেকেই নতুন শুল্ক হার কার্যকর হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শুল্ক যেমন কমানো যায়, তেমনি বাড়ানোও যায়। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যখন যা দরকার সে অনুযায়ী সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। গত বছর আমদানির দরকার হয়েছিল, সেজন্য শুল্ক্ক কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এবছর বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন আমদানি অব্যাহত থাকলে কৃষকরা দাম পাবেন না। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় এখন আবার শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।
গত বছর এপ্রিলে আগাম বৃষ্টি ও পরে হাওর অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার কারণে বোরো উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চাল উৎপাদন ১০ লাখ টন কম হবে। এরপর চালের দাম বেড়ে যায়। সরকার বাজার সামলাতে নিজে আমদানি করে এবং বেসরকারি খাতের আমদানিকেও উৎসাহিত করে। এজন্য চাল আমদানির শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে পর্যায়ক্রমে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। ব্যাংকে বিনা মার্জিনে এলসি খোলার সুবিধা দেওয়া হয়। এরপর গত এক বছরে সব মিলিয়ে ৩৭ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও ৪৫ লাখ টন। আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার ও ব্যাংকের সুবিধা নিয়ে ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি বাড়িয়ে দেন।
এদিকে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির ফলে বিপদে পড়েছেন দেশের কৃষকরা। আমদানি করা চাল বাজার দখলে রাখায় বোরো চাষিরা হাটে-বাজারে ধানের ভাল দাম পাচ্ছেন না। চালকল মালিকেরা ধান না কেনায় দাম গেছে পড়ে, ফলে অনেক জেলায় উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ধান ও চাল বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষককে।
গত বছরের মে মাসের শেষের দিকে প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছিল ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায়। এবার তা ৬০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম কম হলেও চালের বাজারে তার তেমন প্রভাব পড়েনি। প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রি হওয়া এই চালের বেশির ভাগই ভারত থেকে আমদানি করা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে এ বছর ১ কোটি ৯০ লাখ টন ধান উৎপাদিত হবে। এরই মধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে। সরকার ৩৮ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন চাল কেনার ঘোষণা দিয়েছে।
সূত্রঃ দৈনিক সমকাল
ছবিঃ সংগৃহীত