শিক্ষার্থীদের মেধা দেশের কাজে লাগানোর আহ্বান
স্বর্ণ পদক পাওয়া শিক্ষার্থীদের মেধা দেশের কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, শিক্ষা-জীবনে তোমরা যেমন কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছ, তেমনি ভবিষ্যত কর্মজীবনেও নিজেদের মেধা, দেশপ্রেম, ত্যাগ ও তিতীক্ষার মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে তোমরা যথাযথ ও সঠিক নেতৃত্ব দেবে, আমি এ প্রত্যাশা করি।
বুধবার (২৫ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক-২০১৭’ প্রদান অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের মেধা, জ্ঞান ও কর্মের ফলে দেশের উন্নয়নে অধিক গতি সঞ্চারিত হবে ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়তে শিক্ষিত জাতি ও মেধাবী জনগোষ্ঠীর বিকল্প নেই।
‘আর দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবো।’
তিনি বলেন, এবার ১৬৩ জন স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০১ জন নারী। ছেলেদের চেয়ে ভালো করছে মেয়েরা। মেয়েদের অভিনন্দন জানাই।
‘ছেলেদেরও পড়াশোনায় আরো মনোনিবেশ করতে হবে। আমরা চাই সমানে সমান থাকুক। লেখাপড়ার যে সুযোগ আমরা করে দিয়েছি ছেলেরা তা কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাক। ছেলেরা পিছিয়ে থাকবে কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সময় মেয়েদের অবহেলা করা হতো, মেয়েরা পিছিয়ে ছিলো। এখন সেটা নেই। সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে।
‘দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আজকের ছেলে-মেয়েরা আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে, প্রধানমন্ত্রী হবে, দেশ পরিচালনা করবে,’ বলেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আমলে নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের কথাও তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৮৪টি পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও গবেষকরা ইউজিসি ডিজিটাল লাইব্রেরির মাধ্যমে বিশ্বের ১৩টি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রকাশকের ৩৪ হাজারেরও অধিক ই-রিসোর্স এক্সেস সুবিধা পাচ্ছেন।
‘‘২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় ‘উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের অর্থায়নে ৪২২টি রিসার্চ প্রজেক্ট, ২টি টেকনোলজি ট্রান্সফার অফিস, ৮টি ফ্যাবল্যাব, ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পকারখানার মধ্যে যৌথ গবেষণা, ৬৯টি কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স সেল, ১৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল লাইব্রেরি, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩টি ভার্চুয়াল ক্লাস রুম, ১৯টি ক্যাম্পাস নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ফলে গবেষণার প্রকৃত আবহ তৈরি হয়েছে।’’
তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ‘অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন’ পাস হয়েছে এবং শিগগির এর কার্যক্রম শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মানসমৃদ্ধ করা এবং তাদের তদারকি, নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন’ প্রতিষ্ঠার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
‘উচ্চশিক্ষা কমিশন হবে একটি স্বায়ত্বশাসিত স্ট্যাটিউটরি বডি। যার দায়িত্ব হবে শিক্ষা এবং গবেষণার মানকে উন্নত করা। যাতে আমাদের স্নাতকরা বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্নাতকদের সমপর্যায়ে উন্নীত হতে পারে।’
বর্তমানে যেকোন দেশে উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল কিন্তু আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা ব্যয়বহুল নয়।
অনুষ্ঠানে ১৬৩জন শিক্ষার্থীর হাতে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০১৭ সালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন অনুষদে প্রথম স্থান অর্জনকারী ১৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। বাকি তিনজন অন্যান্য বছরের; যারা বিশেষ কারণে আগে পাননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন।
সূত্র ও ছবি ঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম