পুরান ঢাকার অলিগলি-রাস্তা সংস্কার, সরবে কেমিক্যাল গুদাম

  পুরান ঢাকার অলিগলি-রাস্তা সংস্কার, সরবে কেমিক্যাল গুদাম

ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক ব্যবসা সরানোর পাশাপাশি অলি-গলি ও রাস্তাগুলোকে নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে উদ্যোগ নেওয়ার পরও পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম না সরানো দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। 

পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের দেখে সরকারপ্রধান এ মন্তব্য করেন। দগ্ধ ও আহতদের দেখতে শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সোয়া ১০টার পর ঢামেকে আসেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টার দিকে বেরিয়ে যান তিনি।

গত বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতের ওই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৬৭ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে, দগ্ধ-আহত হয়েছেন বহু মানুষ। তাদের মধ্যে অনেককে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। 

এলাকাবাসীর ভাষ্যে, অগ্নিকাণ্ড যে ওয়াহিদ ম্যানশন থেকে ছড়িয়েছে, সেখানে রাসায়নিকের গোডাউন ছিল বলে আগুন এভাবে ছড়িয়েছে। যদিও শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন তা অস্বীকার করেছিলেন। পরে বাংলানিউজসহ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, ওয়াহিদ ম্যানশনের বেজমেন্ট ছিল রাসায়নিকে ঠাসা। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম না সরানো দুঃখজনক। সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে কিছু দিন কাজ হওয়ার পর আর হয়নি। 

পুরান ঢাকায় রাসায়নিক যেন না থাকে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা চান।

অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে দেশবাসীকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশবাসীকে এইটুকু বলবো তারা যেন দোয়া করেন। আমাদের দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে, আর সবাই সতর্ক থাকবেন।
 
পুরান ঢাকার অলি-গলি ও ঘিঞ্জি সড়কগুলোকে নতুন করে গড়ে তোলার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই অলি-গলি, রাস্তা; এগুলো আমাদের নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে। যেন ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা ঢুকতে পারে।

জলাধারগুলো ভরাটের ফলে রাজধানীবাসীর বিপদ বেড়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় অনেক পুকুর ছিল। ধোলাইখাল থেকে শুরু করে অনেক খাল ছিল, শান্তিনগর খাল, সেগুনবাগিচা খাল। দুর্ভাগ্য হলো সেগুলোতে হয় বক্স-কালভার্ট করা হয়েছে, অথবা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। পুকুরগুলো একে একে ভরাট করা হয়েছে।

চকবাজারে আগুন নেভাতে পানি প্রাপ্তির অসুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানি পাওয়া এটা ছিল কষ্টকর। পুরোনো জেলখানার পুকুর থেকে পানি আনা হয়েছে। সব বাড়ি-ঘর থেকে পানি আনা হয়েছে, রিজার্ভ ট্যাংক থেকে পানি দিয়েছে, ওয়াসা সহযোগিতা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরনের আগুন লাগলে পানির যেন অভাব না হয় সে বিষয়টা সবাইকে খেয়াল করতে হবে।

‌ঢামেকে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী বার্ন ইউনিটের দ্বিতীয় তলার নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (আইসিইউ) সামনে যান। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন ‘শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’র প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম।

ডা. কালাম বাংলানিউজকে জানান, প্রধানমন্ত্রী আইসিইউতে এলেও চিকিৎসাধীনদের ইনফেকশন হবে বা চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটবে চিন্তা করে ভেতরে ঢোকেননি। তিনি বাইরে অপেক্ষমান স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাদের বলেন, ‘আপনারা চিন্তা করবেন না। চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার দেখছে। রোগীরা সুস্থ হলে তাদের পুনর্বাসনের চিন্তাও করছে সরকার।’

চিকিৎসকদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আপনারা অনেক কষ্ট করছেন, করেছেন। রোগীরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে সেটাও দেখবেন।’

অগ্নিকাণ্ডের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে জানান, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সারারাত উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সারারাত জেগে উদ্ধার কাজ তদারক করেছেন। এ ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন তিনি।

সূত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম