দূতদের অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দিতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতদের রাজনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (২০ জুলাই) স্থানীয় সময় বিকেলে লন্ডনের একটি হোটেলে বাংলাদেশি দূত সম্মেলনে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই দূত সম্মেলনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং স্থায়ী প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
অর্থনৈতিক কূটনীতির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি আমাদের অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোতে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বিনিয়োগ আকর্ষণ, ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধি, ইউরোপে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে বলেন রাষ্ট্রদূতদের।
বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের আরো ভালো ও দ্রুত সেবা দেওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আরও গভীর, বিস্তৃত ও শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপনে কার্যকর ও সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা নিতে রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বিশেষ করে ইউরোপের শ্রমবাজারে দক্ষ মানবসম্পদ রপ্তানি বৃদ্ধির তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে। বিশ্ব চাকরি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশের এখন অনেক বড় এবং দক্ষ যুব শক্তি রয়েছে।
রাষ্ট্রদূতদের নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত দেশে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে বাধাগুলো চিহ্নিত করে ও তা সমাধানের উপায় বের করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরইমধ্যে জিডিপি ৮ দশমিক ১ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ এখন আর সাহায্য নির্ভর দেশ নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেটের ৯০ শতাংশ অর্থ নিজস্ব অর্থায়ন থেকে আসবে। নির্বাচনে পরাজিত কয়েকটি চক্র চলমান উন্নয়ন ব্যাহত করতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
নির্বাচনে অর্থবহ অংশগ্রহণের পরিবর্তে বিএনপি গত নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে বলেও অভিযোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন আর প্রপাগান্ডায় বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে অর্জিত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জনগণের আস্থা রয়েছে।
জাতির পিতা প্রণীত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এই বিদেশ নীতি বাংলাদেশকে বৈশ্বিক পর্যায়ে সম্মান এনে দিয়েছে।
কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়সহ বিভিন্ন বির্তকিত ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটেরও সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পূর্ব-পশ্চিমের সেতুবন্ধন হতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনও সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক।
সম্মেলনে বাংলাদেশের দূতদের মধ্যে অংশ নেন - আবু জাফর (অস্ট্রিয়া), শাহাদৎ হোসেন (বেলজিয়াম), মুহম্মদ আবদুল মুহিত (ডেনমার্ক), কাজী ইমতিয়াজ হোসেন (ফ্রান্স), ইমতিয়াজ আহমেদ (জার্মানি), জসিম উদ্দিন (গ্রীস), আবদুস সোবহান সিকদার (ইতালি), শেখ মোহাম্মদ বেলাল (নেদারল্যান্ডস), মুহম্মদ মাহফুজুর রহমান (পোল্যান্ড), রুহুল আলম সিদ্দিক (পর্তুগাল), ড. এস এম সাইফুল হক (রাশিয়া), হাসান মোহাম্মদ খন্দকার (স্পেন), নাজমুল ইসলাম (সুইডেন), শামীম আহসান (সুইজারল্যান্ড) এবং সাইদা মুনা তাসনীম (যুক্তরাজ্য)।
সম্মেলনে বিভিন্ন দেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত দূতরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যক্রম, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে পৃথক পৃথক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) স্থানীয় সময় বিকেলে সরকারি সফরে লন্ডন আসেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) দেশে ফেরার কথা প্রধানমন্ত্রীর।
সূত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম