মাতৃভাষার জন্য জীবন দেয়া সাহসী জাতি আমরা-পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘আমরাই সম্ভবত বিশ্বের একমাত্র জাতি-যারা মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে। আমাদের মাতৃভূমির সাহসী সন্তানেরা সেই বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।’
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘শহিদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৩’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির পর প্রথম আঘাত আসে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার ওপর। যদিও আমরা, বাঙালি জনগণ তৎকালীন পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশেরও বেশি ছিলাম, কিন্তু পাকিস্তান সরকার নির্লজ্জভাবে আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল এবং তৎকালীন পাকিস্তানের মাত্র ৪ শতাংশ জনগণের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছিল। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন এই অন্যায় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন।’
ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনেও গতি ও শক্তি যুগিয়েছে উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ভাষা আন্দোলনের বিজয় বাঙালিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল। তিনি বলেন, “১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আমাদের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা ১৯৬৯ গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং অবশেষে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতার মতো বিজয়গুলো ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও আদর্শের প্রভাবেই অর্জিত হয়েছে।”
ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা ও প্রসারে শেখ হাসিনার সরকার সবকিছু করছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি ভাষা জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশে, আমরা সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। এছাড়া স্থানীয় এবং আঞ্চলিক উপভাষাগুলিকেও সমানভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।’
শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমি’র সুগন্ধা প্রান্ত হতে শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফরেন সার্ভিস একাডেমির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। শোভাযাত্রাটি ফরেন সার্ভিস একাডেমির মূল ভবনের সম্মুখে স্থাপিত অস্থায়ী শহিদ মিনারের সামনে এসে শেষ হয়। শহিদ মিনারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) এবং অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ, ফরেন সার্ভিস একাডেমির পক্ষ হতে ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ, ফরেন সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতির নেতৃত্বে এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ এবং ঢাকাস্থ কূটনৈতিক কোরের সদস্যবৃন্দ পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমির অডিটরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকায় নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত Marie Masdupuy।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিববৃন্দ, ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকবৃন্দ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফরেন সার্ভিস একাডেমির কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘ ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে এবং বিশ্বের সকল ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২০০০ সাল থেকে দিবসটি ইউনেস্কোর সকল সদস্য রাষ্ট্রে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
সূত্রঃপিআইডি