গ্রামের কর্মস্থলে থাকতেই হবে : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে গ্রামের কর্মস্থলে চিকিৎসক উপস্থিতি নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নিজের কার্যালয়ে সমকালের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় গ্রামের কর্মস্থলে অনুপস্থিত ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সরকারের পরিকল্পনাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেন, গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে। সেজন্য জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের কর্মস্থলে ডাক্তারদের উপস্থিতি সরকার যে কোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে চায়।
নতুন নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকদের নূ্যনতম তিন বছর উপজেলায় অবস্থান করতে হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে পাঁচ হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনের আগে আরও পাঁচ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সাড়ে চার হাজার নার্স নিয়োগের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও নার্সরা উপজেলায় অবস্থান করে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন। এ জন্য নিয়োগের পর তিন বছর তাদের উপজেলায় থাকতে হবে। এর আগে বড় শহর বা ঢাকায় আসার কোনো তদবির করা চলবে না।
চিকিৎসকদের গ্রামে থাকতে না চাওয়ার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে এখন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। শহরের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং রাস্তাঘাটেরও উন্নতি হয়েছে। উন্নত স্কুল-কলেজেরও অভাব নেই। অথচ মফস্বলে পদায়ন করা হলে কিছুদিন পরই তদবির করে তারা শহরে চলে আসেন। ইউএনও থাকেন, অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারাও থাকেন; তাহলে তারা কেন পারবেন না? এটা হতে পারে না। তাদের অবশ্যই গ্রামে থাকতে হবে।
এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত কয়েক মাসে গ্রাম থেকে কাউকে ঢাকায় পদায়ন করা হয়নি উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক মাসে উপজেলা, জেলা কিংবা বিভাগীয় শহর থেকে একজন চিকিৎসককেও ঢাকায় বদলি করা হয়নি। তবে সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের কর্মরত ১১০ চিকিৎসককে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।
মোহাম্মদ নাসিম জানান, যেসব ডাক্তার দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ওএসডি হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে সংযুক্তি থেকে কাজ করছিলেন, তাদের ঢাকার বাইরে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালট্যান্টদের যারা জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করার বদলে ওএসডি সংযুক্তি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন, তাদের জেলা ও উপজেলায় বদলি করা হয়েছে। আরও তালিকা করা হচ্ছে। ওএসডি সংযুক্তি নিয়ে কেউ থাকতে পারবেন না।
চিকিৎসকদের বদলি করা হলে তা ঠেকাতে বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির করা হয় জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি চিকিৎসকদের বিভিন্নজনকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলে তা ঠেকাতেও তদবির করা হয়। অথচ চিকিৎসকরা যখন সরকারি চাকরিতে যোগ দেন, তখন সরকারের কর্মচারী হন। সরকার যে অবস্থানে যাকে কাজে লাগাতে চাইবে, তাকে সেই জায়গার জন্য প্রস্তুত থাকবে হবে। তিনি বলেন, তা হলে কেন তদবির করা হবে? স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে বলতে পারি, চিকিৎসক বদলির জন্য যারা তদবির করেছেন, তাদের কারও তদবির রাখা হয়নি। গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে কোনো আপস চলবে না। গ্রাম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংশ্নিষ্ট সব মহলের সহযোগিতা চাচ্ছি।
গ্রামের কর্মস্থলে চিকিৎসক অনুপস্থিতি ও শূন্য পদের চিত্র তুলে ধরে এর সমাধানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরিকল্পনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে উপজেলায় যেসব চিকিৎসক থাকতে চান না, তাদের চাকরি ছেড়ে দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন। সরকারি চাকরি করবেন আর উপজেলায় থাকবেন না- এটা তো হতে পারে না। কোনো হাসপাতালে আর সংযুক্তি থাকবে না। ঢাকার পাশাপাশি বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়েও যেসব সংযুক্তি রয়েছে, তা আর থাকবে না। সরকারের এই নির্দেশ অমান্য করলে তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
মাঠপর্যায়ে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে ধরে রাখার বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে না বলেও অভিযোগ রয়েছে- স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরে মতামত চাইলে তিনি বলেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বিনা অনুমতিতে কোনো চিকিৎসক কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে তাদের নাম মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে পাঠাতে বলা হয়েছে। তাদের পাঠানো প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বেশ কিছু চিকিৎসককে শাস্তির আওতায়ও আনা হয়েছে। বর্তমানে সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকেই তাদের নিয়মিত মনিটর করা হচ্ছে। অনুপস্থিত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে মাঠপর্যায়ে চিকিৎসক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম। তিনি বলেন, গ্রামের কর্মস্থলে যেসব চিকিৎসক থাকবেন, তাদের প্রণোদনাসহ বাড়তি সুযোগ-সুবিধা, উচ্চশিক্ষার কোর্সে ভর্তির সুযোগসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব বাস্তবায়িত হলে গ্রামের কর্মস্থলও চিকিৎসকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
সূত্রঃ দৈনিক সমকাল
ছবিঃ সংগৃহীত