নির্বাচন নিয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই: ওবায়দুল কাদের

নির্বাচন নিয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই। পরিষ্কারভাবে একটা কথা বলতে চাই, এদেশের রাজনীতি নিয়ে দেশের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে। বিদেশি শক্তি আমাদের বন্ধু হতে পারে। কিন্তু কোনো বিদেশি শক্তি আমাদের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করবে, এটা আশা করি না।

মঙ্গলবার ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আওয়ামী লীগ একটি রাজনৈতিক দল। আজ আছি, কাল না-ও থাকতে পারি। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস দেশের জনগণ। জনগণই নির্ধারণ করবে কে ক্ষমতায় থাকবে আর কে থাকবে না। এ বিষয়ে কেউ ডিকটেট করুক, সেটি চাই না। এসব ব্যাপার আমরাই ঠিক করব। আর ভারত অতীতেও এদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেনি, এবারও করবে না।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি তিনদিনের ভারত সফর শেষে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে জেট এয়ারওয়েজের একটি বিমানযোগে বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।

স্বাগত জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া প্রমুখ।

ভারত সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে বিজেপির উর্চ্চপর্যায়ের অনেক নেতার কথা হয়েছে। বিজেপির নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন তারা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে। মোদিকে তারা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তিনি (মোদি) দুজনে মিলে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করায় তিনি ও তার সরকারের প্রতি 'গুড উইল' সৃষ্টি হয়েছে। এখন তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়ন করলে 'ট্রিমেন্ডাস গুড উইল' সৃষ্টি হবে। এটি একটি বাস্তবতা, এটাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, ভারতের ক্ষমতাসীন দলের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছেন তারা। সেখানে পার্টি টু পার্টি আলোচনাই হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দল সব ইস্যুর ওপর কথা বলেছেন। সীমান্তচুক্তির জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন তারা। ভারতের নেতারাও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করেছেন। এই দুই নেতা নিজ নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় ছিলেন বলে এটা সম্ভব হয়েছে। আশা করি, তিস্তা চুক্তিও হবে। এদেশে পানির জন্য যে হাহাকার আছে, সেটি প্রতিনিধি দলটি তুলে ধরেছেন। এই চুক্তি হলে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'নিজ দেশের স্বার্থে আমরা যেকোনো দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক করতে পারি। আমাদের বিজেপি আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমরা কী সেখানে খেতে গেছি নাকি? ওখানে কী আমরা বেড়াতে গেছি? আনন্দ-উল্লাস করতে গেছি? বিজেপির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হলে অসুবিধা কোথায়? আমরা ভারতের নেতাদের সঙ্গে সিরিয়াসলি আলাপ আলোচনা করেছি।' বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি কিছু বলেননি বলেও জানান তিনি।

দুই-একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে ভারত সফরের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কারণ তথ্য দেওয়া না হলে সেটা শুভ নয়। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভাল। তাই সফর সংক্রান্ত কিছু গোপন করতে চান না তারা। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সবকিছু প্রকাশ করা হবে। যেন কোনো গুজব না ছড়ায়। আর ভারতের সংবাদিকরাও অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারা কিছুই বলতে চাননি। তাদের ইচ্ছে ছিল দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সব কিছু বলার।

তারেক রহমানের নাগরিকত্ব ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাকে ওবায়দুল কাদের বলেন, গত তিনদিন দেশের বাইরে ছিলেন তিনি। তাই ভালো করে না জেনে এখনই কিছু বলতে পারবেন না তিনি। তবে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উ্রপস্থিত থাকা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন - দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, অ্যাডভোকেট মিজবাহউদ্দিন সিরাজ, এ কে এম এনামুল হক শামীম, ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া রাব্বানী চিনু।

এর আগে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি গত রোববার ভারত সফরে যায়। ওইদিন রাতে বাংলাদেশের হাইকমিশনের আয়োজনে নৈশভোজে অংশ নেন তারা।

পরদিন সোমবার সকালে ভারতের লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং পার্লামেন্ট অধিবেশন পরিদর্শন করেন নেতারা। একই দিন বিজেপির নেতা এম জে আকবরের দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ ছাড়াও বিকেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠকে মিলিত হন তারা।

পরে বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ ও সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করে এই প্রতিনিধি দল। পরে ভারত সরকারের বাণিজ্যমমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর বাসভবনে নৈশভোজে অংশে নেন তারা। প্রতিনিধি দলটি এছাড়াও মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়ালে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনদিনের সফর শেষে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার উদ্দেশ্যে নয়াদিল্লি ত্যাগ করে প্রতিনিধি দলটি।

 

সূত্রঃ দৈনিক সমকাল

ছবিঃ সংগৃহীত