রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ মিয়ানমার নাগরিককে সসম্মানে ফেরত পাঠাতে  আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য ভারতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

বুধবার (০৯ মে) সকালে চট্টগ্রাম বন্দরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) জন্য ভারতের ত্রাণসামগ্রী গ্রহণকালে এ অনুরোধ জানান।

মন্ত্রী বলেন, সাহায্য দিয়েই কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা স্থায়ী সমাধান চাই।  তার জন্য ভারতের বিশেষ ভূমিকা আমরা আশা করি। সাহায্যের চেয়ে বেশি প্রয়োজন মিয়ানমার থেকে আগত বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সসম্মানে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সাহায্যের হাত বাড়ানোর অনুরোধ জানাই।  আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে মিয়ানমারকে তার নাগরিকদের সসম্মানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করতে চাই।  ত্রাণের চেয়ে বেশি সাহায্য হবে তাদের ফেরত নিতে বাধ্য করা। হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাই।  মিয়ানমারের নাগরিকদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে।

আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রীর হাতে ত্রাণ হস্তান্তর করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

গত ৫ মে বিশাখাপত্তম বন্দর থেকে ত্রাণ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয় ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ‘ঐরাবত’। মঙ্গলবার (৮ মে) জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে।

ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে তারা আমাদের শুধু সাহায্যই করেনি, অস্ত্র দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, মহান যুদ্ধে ভারতের হাজার হাজার সৈনিক আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন উৎসর্গ করেছেন।  আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। প্রায় এক কোটি মানুষকে ভারত সরকার, ভারতের জনগণ ১৯৯১ সালে আশ্রয় দিয়েছে, খাবার-চিকিৎসাসহ সর্বপ্রকার সহযোগিতা করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ। শরণার্থী বলতে কী বোঝায় কীভাবে সাহায্য করতে হয় তারা জানে।

মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের প্রায় ১২ লাখ নাগরিক বাংলাদেশে এসেছে।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দিক বিবেচনা

করে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।  বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ অত্যন্ত কষ্ট করে তাদের বুকে টেনে নিয়েছেন। আশ্রয় দিয়েছেন। ভারতসহ অসংখ্য দেশ মানবিক জীবনযাপনে থাকা রোহিঙ্গাদের সাহায্য করেছেন।  সে সব দেশকে অভিনন্দন জানাই।  ভারত সরকার বিশেষ করে এখানে উপস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।  তিনবার তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, এর আগেও ভারত রোহিঙ্গাদের জন্য ২৭৯ টন চাল, ৫৬ টন ডাল, ৬২ হাজার ৯৪০ লিটার ভোজ্যতেল, ৫৫ টন লবণ, ৫৫ টন চিনি, ৫৫ টন গুঁড়োদুধ, ১ লাখ ১০ হাজার ৭৬৮টি সাবান, ১৫ হাজার ৩৯৩ ব্যাগ খাদ্যসামগ্রী ও ২৭ হাজার ৮৯২ কেজি চা দিয়েছিল।

এ পর্যন্ত ১১ লাখ ১২ হাজার ৩০৮ জন রোহিঙ্গার নিবন্ধন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন এতিম শিশু শনাক্ত হয়েছে। ৩০টি ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। ২ লাখ ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।  ২৫ হাজার পরিবারকে পাহাড়ের ঢাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ৯ কিলোমিটার এলাকা বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। ১৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।  ১০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সবচেয়ে বড় সমস্যা জ্বালানি সংকট। সেখানকার পাহাড়ে এখন গাছপালা নেই বললেই চলে। প্রথমে পাহাড়ের ডাল-পালা কাটা হয়েছে। এরপর গাছ কাটা হয়েছে। গাছের গোড়া পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে রান্নার জন্য।বলতে গেলে পাহাড়গুলো এখন গাছশূন্য, খালি বলা চলে। ভারত সরকার ২৫ হাজার স্টোভ আর ১ মিলিয়ন লিটার কেরোসিন তেল ত্রাণ হিসেবে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। 

তিনি বলেন, এবার অতিবৃষ্টি, আগাম বৃষ্টি ও ঝড়-তুফানের আশঙ্কা রয়েছে।  ৫০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবার পাহাড়ের ঢাল বা উঁচুতে বসবাস করছে।  পাহাড়ধস ও অতিবৃষ্টি হলে অনেক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।  সেই বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে তাদের সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।  ইতিমধ্যে ৮ থেকে ১০ হাজার পরিবার সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।  আশাকরি, এ মাসের মধ্যে ২০-২৫ হাজার পরিবারকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হবো।  

ত্রাণ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল, শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ ‍আবুল কালাম, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, সচিব ওমর ফারুক, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল প্রমুখ।

 

ছবি ও সংবাদঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম