ওদের কী ভাউচার দেব? স্যাটেলাইটের ব্যয় প্রসঙ্গে মন্ত্রী
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্পে স্বচ্ছতার সঙ্গে ব্যয় করা হয়েছে জানিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, কেউ যদি কথা বলেন, জেনে কথা বলা উচিত। আমরা অবারিত তথ্য দিচ্ছি।
বিএনপির দু’একজন নেতা এ প্রকল্পে ব্যয়ের হিসাবের প্রশ্ন তোলার বিষয়টি মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমরা তো গোপনে কিছু করিনি। আমি কত টাকার প্রকল্প নিয়েছি। সেখান থেকে ২০০ কোটি টাকা কমে এটি সম্পন্ন করেছি, সেটি অত্যন্ত স্পস্ট। এরমধ্যে কোনো রকমের…। আর কী হিসাব দেব? ওদের কী ভাউচার দেব আমরা? যে, রিকশা ভাড়া কত দিয়েছি, কিভাবে কোন জায়গাতে কত টাকা খরচ করেছি?
বুধবার (১৬ মে) টেলিযোগাযোগ ও তথ্যসংঘ দিবস উপলক্ষে রমনায় বিটিআরসি ভবন থেকে বর্ণাঢ্য রোড শো উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
‘এটি বস্তুতপক্ষে বোঝার বিষয় হচ্ছে, আমরা একটি প্রতিষ্ঠানকে চুক্তিবদ্ধভাবে দায়িত্ব দিয়েছিলাম স্যাটেলাইট সম্পন্ন করার জন্য। এই চুক্তি প্রকাশ্য, কোনো গোপনীয়তা নেই এতে। একই সঙ্গে আমরা উৎক্ষেপণের জন্যও চুক্তি করেছি। আমাদের এই অংশগুলো গেছে। দেন এটি প্রশিক্ষণের দায়িত্ব, পরিচালনার ক্ষেত্রে দায়িত্ব রয়েছে। এসমস্ত বিষয়গুলো আমরা একেবারে স্পস্টভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে করেছি।’ যোগ করেন মন্ত্রী।
তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, এটির ক্ষেত্রে খুব স্পস্ট, কেউ যদি কথা বলেন, জেনে কথা বলা উচিত। যদি জানতে চান, আমাদের কাছে তথ্য চান কেউ, আমরা অবারিত তথ্য দিচ্ছি। সুতরাং তথ্যের ঘাটতি তো দেখি না।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমি বিশ্বাস করি মিথ্যা দিয়ে বেশি দূর যাওয়া যায় না। বিভ্রান্ত করার চেষ্টা সফল হয় না। কারণ পুরো বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নিয়ে যে পরিমাণ আনন্দিত, এটি নিয়ে দু’একজনের মিথ্যা বা বিভ্রান্তকর তথ্য দেওয়ার ফলে ক্ষতি হবে বলে মনে করি না।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা বা টেলিযোগাযোগের পুরো কর্মকাণ্ডের মধ্যে উজ্জ্বল তারকা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। বাংলাদেশ একটি স্যাটেলাইটের মালিক হতে পারে এটা বহু লোক কল্পনাও করতে পারে নাই। আমাদের লোকজন এখনও পর্যন্ত কেউ কেউ এটাকে ঠিক হজম করে ওঠতে পারছেন না। আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি, আমরা কেবল পারি না, আমরা খুব দক্ষতার সঙ্গে পেরেছি।
দেশে স্যাটেলাইট তৈরির উদ্যোগ ও গবেষণার জন্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, আমরা এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছি, বসে আছি যে, কে কখন আমার কাছে সহযোগিতা নিতে আসবেন। শুধু এটুকু প্রমাণ করা দরকার তিনি যা করতে চান তার সম্ভাব্যতা ঠিক আছে, এটা মানুষের কাজে লাগবে। এর একটি, দু’টি না, অনেকগুলো প্রকল্প থেকে সহযোগিতার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
তিনি বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানো স্যাটেলাইট সরকারি প্রকল্প ছিল না, একাডেমিক ছিল। একটি বিশ্ববিদ্যালয় আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় তৈরি করেছে। আমার জানামতে তারা আমার কাছে সহযোগিতার জন্য আসেনি।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আয়ু ১৫ বছর জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর একটি বিকল্প ব্যবস্থাও দরকার। ১-এর পর ২-এ যাবো, এটা প্রত্যেকেরই ধারণা থাকা উচিত। আমরা মহাকাশে কেবল ঠাঁই পেয়েছি, একটু বসি। বসার পরে পরিকল্পনা করি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অন্তত ৫০ বছর সামনে দেখার মতো দৃঢ় দৃষ্টি রাখেন। তার নির্দেশনা যেভাবে থাকবে, আমরা ২, ৩, ৪ যখন পরিকল্পনা করার, সেভাবে পরিকল্পনা করব।
১৭ জুন পালিত হতে যাওয়া দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিবাচক ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি।’ প্রতিপাদ্য স্মরণ করে দিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, টেলিযোগাযোগের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এখন নবীন যে প্রযুক্তিগুলো দুনিয়া কাঁপাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। অর্থাৎ যন্ত্র মানুষের মতো বা কাছাকাছি পর্যায়ের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে মানুষের সেবা করতে পারে কি না- সেই জায়গাতে আমরা গুরুত্ব দিয়ে আসছি।
মন্ত্রী এও বলেন, বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান আইওটি নিয়ে জাপানে কাজ করে। আমাদের ছেলেমেয়েরা এখন কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা নিয়ে পড়াশোনা করে, রোবোটিক্স নিয়ে ব্যাপকভাবে চর্চা করে। এই দিবসগুলো উদযাপনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে চাই যে, তাদের সামনে দিনে সারা পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিতে হবে। সেই নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলার কাজ আমাদের।
‘আমরা প্রত্যেকটি মানুষের কাছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছাতে চাই, মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছাতে চাই’, বলেন মন্ত্রী।
রোড শো’তে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ছাড়াও বিটিআরসিসহ অধীন সংস্থা, বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর বর্ণাঢ্য আয়োজনে অংশ নেয়।
গত ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে উৎক্ষেপণের পর স্যাটেলাইটটি নিজ কক্ষপথের দিকে এগোচ্ছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
সূত্র ও ছবি ঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম