নির্বাচনে না যাওয়ার হুমকি-ধমকি দিয়ে লাভ হবে না: মেনন
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, সাংবিধানিকভাবে যথাসময়েই আগামী নির্বাচন হবে। খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে জেলে গেছেন, তার জন্য নির্বাচনে না যাওয়ার হুমকি-ধমকি দিয়ে কোনো লাভ হবে না।
শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সামাজিক ন্যায্যতা-সমতা প্রতিষ্ঠাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক জনগণতান্ত্রিক আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দলের ২১ দফা দাবিতে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী নির্বাচনকে দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, সামনে কঠিন দিন। আগামী নির্বাচনেই স্থির হবে, আমরা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা টিকিয়ে রাখব, নাকি বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতি-লুটপাট, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদী ও মৌলবাদী রাজনীতির কাছে দেশকে তুলে দেব। তাই ক্ষমতার মালিক জনগণকে নির্ধারণ করতে হবে, আগামী নির্বাচনে দেশ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগিয়ে যাবে, নাকি আবার দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ও জঙ্গিবাদের রাজনীতিতে ফিরে যাবে। এই নির্বাচনে যদি অসাম্প্রদায়িক শক্তি হেরে যায়, তাহলে বাংলাদেশ আবার হেরে যাবে। মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে বাংলাদেশ।
অসাম্প্রদায়িক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে ইতিহাসের উল্টো যাত্রা শুরু হয়েছিল। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা উল্টো যাত্রার বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ফিরিয়ে এনেছি। অসাম্প্রদায়িক ঐক্য আরও সুদৃঢ় করে তা অব্যাহত রাখতে হবে। এই অগ্রযাত্রা ধ্বংস করতে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদী অপশক্তি কোনো ষড়যন্ত্র করলে তা বুক চিতিয়ে প্রতিহত করা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার রায় প্রসঙ্গে মেনন বলেন, অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন- এসব মামলা ও রায়ের মধ্য দিয়ে জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চলছে। কিন্তু জিয়া পরিবারের ঐতিহ্যই হচ্ছে, দুর্নীতি-লুটপাট ও বিদেশে অর্থপাচার করা।
বর্তমান সরকারের সময় যুদ্ধাপরাধী ও ২১ আগস্টের খুনিদের বিচারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে সরকার বিএনপি-জামায়াতের কলিজায় হাত দিয়েছে। তাই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র রুখতে পারে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য। যারা বলেন এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় তারাই যথেষ্ট- তারা আসলে বিএনপি-জামায়াতের এগিয়ে যাওয়ার পথই খুলে দিচ্ছেন।
শনিবারের এই মহাসমাবেশকে ঘিরে ক্ষমতাসীন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। সারাদেশ থেকে দলের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী মহাসমাবেশে যোগ দেন। তারা বিভিন্ন রকম স্লোগানসহ বাদ্য-বাজনা বাজিয়ে সমাবেশস্থলকে মুখর করে রাখেন। এ উপলক্ষে মহাসমাবেশস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকা লাল পতাকা ও বর্ণাঢ্য সাজে সাজিয়ে তোলা হয়।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আরও বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় গিয়ে ১৪ দল ও সরকার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লড়াই করছে। দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে নিয়ে যাচ্ছে। তবে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে অকপটে স্বীকার করছেন তিনি, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িকতার নীতি এখনও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেননি তারা।
মেনন বলেন, এখনও সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে শেষ করতে পারেননি। বরং সারাদেশে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। হেফাজতিদের কাছে নতিস্বীকার করে পাঠ্যপুস্তককে সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়েছে। যারা শাপলা চত্বরে বসে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিল, তারাই আজ অনেকের বন্ধু হয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী-এমপিদের বেতন বাড়ে। কিন্তু শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর কথা বললেই বলা হয়, বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে দেশে ন্যায্যতাভিত্তিক সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি আছে, কিন্তু সমতা নেই। আয়-বৈষম্য আর ধনী-গরিবের বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করছে। দারিদ্র্যসীমা কমলেও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কম নয়। তিন কোটি মানুষকে দরিদ্র রেখে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এগিয়ে নেওয়া যাবে না। দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে উন্নয়নের কারিগর শ্রমিক শ্রেণির ভাগ্যের উন্নয়ন করতে হবে।
অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি তথা ১৪ দলীয় জোটের ঐক্য আরও জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, একদিনের জন্যও যদি আমরা এই ঐক্য থেকে সরে যাই, তাহলে দেখা যাবে আমাদের ওপর কত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চেপে ধরবে। কত সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী হামলা আমাদের ছিন্নভিন্ন করে দেবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করলেও জাতির মুক্তি অর্জিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গরিব মানুষের মুক্তি আজও আসেনি। তাই সামাজিক ন্যায্যতা-সমতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
জাতীয় সঙ্গীত ও আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে আরও বক্তব্য রাখেন দলের পলিটব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস, আনিসুর রহমান মল্লিক, নুরুল হাসান, মাহমুদুল হাসান মানিক, ড. সুশান্ত দাস, ইকবাল কবির জাহিদ, হাজেরা সুলতানা, মনোজ সাহা, আমিনুল ইসলাম গোলাপ, অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি, কামরুল আহসান প্রমুখ। পরিচালনা করেন পলিটব্যুরোর সদস্য নুর আহমদ বকুল।
সূত্রঃ দৈনিক সমকাল
ছবিঃ সংগৃহীত